দখিনের খবর ডেস্ক ॥ পদ্মাসেতু, পায়রা বন্দর ও রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে পিছিয়ে থাকা নদীবেষ্টিত বরিশাল হবে শিল্পোন্নত এক বিভাগের নাম। একটা সময় শহরে পাঁচতলার ওপরে ভবন দেখা যেত না। সেই পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। বরিশাল শহরে এখন হিড়িক পরেছে বহুতল ভবন নির্মাণের। বাড়ছে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। গ্রামের একচালা ও দোচালা ঘরগুলো ভেঙে বানানো হচ্ছে সুরম্য দালান। যে হারে পাল্লা দিয়ে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হচ্ছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য সে মাত্রায় বরিশালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উন্নয়ন হয়নি। ফায়ারম্যানদের দাবি, বিভাগে যে জনবল রয়েছে তাদের দক্ষতায় এখন অবধি অনেক অসম্ভব কাজও সম্ভব হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, নদীবেষ্টিত বরিশাল বিভাগে রয়েছে মাত্র দুটি নৌ-ফায়ার স্টেশন। এরমধ্যে একটি বরিশাল ও অপরটি পটুয়াখালী সদরে। সবমিলিয়ে বরিশাল বিভাগের ৪২টি উপজেলায় বর্তমানে ৩৮টি ফায়ার সার্ভিসের স্থল স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত স্টেশন মাত্র তিনটি, ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত ২৩টি ও ‘সি’ শ্রেণিভুক্ত ১০টি। বাকি দুটি নদী ফয়ার স্টেশন। আর ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত স্থল কাম নদী স্টেশন নেই একটিও। অপরদিকে বরিশালের মুলাদী ও বরগুনার তালতলীতে স্টেশন নির্মাণের কাজ চললেও বরিশালের আগৈলঝাড়া ও পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় এখনো কোন স্টেশন নেই। এ দুটির মধ্যে আগৈলঝাড়ায় স্টেশন নির্মাণের চিন্তা ভাবনা থাকলেও এখনো পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে স্টেশন নির্মাণের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনাই করা হয়নি। সূত্রমতে, এর বাহিরে বরিশাল নগরীতে আরও একটি এবং কুয়াকাটায় একটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন সার্ভিসের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদী বেষ্টিত বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলায় ন্যূনতম একটি করে নদী স্টেশন ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে আরও একটি নদী স্টেশনের প্রয়োজন রয়েছে। এর বাইরে আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রপাতিরও চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে টার্ন ট্যাবল লেডার (টিটিএল) অর্থাৎ উঁচু ভবনের আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের মই নেই। সেক্ষেত্রে উঁচু ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ম্যানুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধুমাত্র ১৮শ’ থেকে ছয় হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পানিবাহী গাড়ির ওপর ভরসা করেই আগুন নেভানোর কাজ করতে হবে ফায়ারম্যানদের। সেক্ষেত্রে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই আগুন নেভাতে হবে তাদের। এ ছাড়া এ অঞ্চলের জন্য স্টেশন ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ পোর্টেবল পাম্পেরও সংকট রয়েছে। অপরদিকে দুটি নদী স্টেশনের মধ্যে একটিতে ফায়ার ফাইটিং জলযান থাকলেও অপরটিতে নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সদর নদী স্টেশনের আওতায় যে জলযানটি রয়েছে তা দিয়েও আগুন নেভানোর কাজ করতে হয় পোর্টেবল পাম্পের সহায়তায়। আর এই স্টেশনের আওতায় বিভাগের একটি মাত্র স্পিডবোট দিয়েই নদীপথে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে ফায়ারম্যান ও ডুবুরিরা। অপর দুটি নৌ স্টেশন অর্থাৎ ছয় জেলা মিলিয়ে বরিশালে বর্তমানে রয়েছে মাত্র দুইজন ডুবুরি। যাদের শুধু বরিশালের ছয় জেলাই নয়; দুর্ঘটনায় পার্শবর্তী মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলাতেও সহায়তা করতে হয়। আবার বিভাগে পানিবাহী ও মালামাল বহনকারীসহ উদ্ধারকাজে সহয়তাকারী যানবাহনের তেমন একটা সংকট না থাকলেও যে কয়টি এ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেল রয়েছে তাও প্রায় নষ্ট হচ্ছে। রয়েছে বহু পুরাতন ফায়ার ফাইটিং জলযান, গাড়ি রয়েছে সার্ভিসে। ফলে সময়ের প্রয়োজনে সেগুলোও নাগরিক সেবার কাজে আসে না। তাছাড়া জনবল চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক এবিএম মমতাজ উদ্দিন বলেন, গত ১০ বছরে ফায়ার সার্ভিসে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আমাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি, সরঞ্জাম, যানবাহন প্রতিনিয়ত সংযুক্ত হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের ফায়ার ফাইটাররা আধুনিক নানা কৌশল রপ্ত করছে। দেড় থেকে দুইবছর আগে সরকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতি জেলায় একটি করে নদী স্টেশন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলাগুলোতে গুরুত্ব বুঝে নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ও বিভাগের জনবল সংকট নিরসনেও কাজ করা হচ্ছে। উঁচু ভবনে আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত কোনো বিশেষ ধরনের লেডার না থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব যন্ত্রপাতি বিশেষ করে এ অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো সময় এবং চাহিদা অনুযায়ী সংযোজন করা হচ্ছে। যেমন পোর্টেবল পাম্পের একটির চাহিদা আমরা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। এরমধ্যে একটি পাম্প পেয়ে পিরোজপুর সদর স্টেশনকে দেওয়া হয়েছে। তবে বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে নির্মাণ আইনের প্রতি জোর দেওয়াটা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যদি সবাই সচেতন হয়, তবে আগুন লাগার ঘটনা যেমন কমবে, তেমনই আগুন লাগলেও ক্ষয়ক্ষতি কিংবা এর পরিধি ব্যাপক হবেনা। তাই আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও কাজ করছি। তাছাড়া অগ্নি নির্বাপনের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, এ্যাম্বুলেন্সসহ যেসব যানবাহন বিকল হচ্ছে, তা নিয়মানুযায়ী মেরামত করে সার্ভিসে রাখা হচ্ছে। সবকিছুই সময়ের সাথে সাথে সংযুক্ত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Leave a Reply